Apan Desh | আপন দেশ

সেই রায়হান বাদশাই হলেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৫:৪৫, ২৫ আগস্ট ২০২৪

সেই রায়হান বাদশাই হলেন ইইডির প্রধান প্রকৌশলী

সংগৃহীত ছবি

দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সেই প্রকৌশলীই দায়িত্ব পেলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধানের। নাম মো: রায়হান বাদশা। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতাও। আজ রোববার (২৫ আগস্ট) শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আম্বিয়া সুলতানা তাকে নিয়োগদানপূর্বক (চলতি দায়িত্ব) প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। 

এদিকে রায়হান বাদশার নিয়োগের খবরে তপ্ত-আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর। যুগযুগ ধরে বৈষম্যের শিকার প্রকৌশলীরা আছেন রকমফের আতঙ্কে। গোপালগেঞ্জের জামাতা মো: রায়হান বাদশার অনুসারিরা ইতোমধ্যে অনেক প্রকৌশলীকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ভীত প্রকৌশলীদের অনেকেই অফিসে হাজির হলেও অবস্থান করছেন স্বল্প সময়। 

ক্ষুব্ধ প্রকৌশলীদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত ও জনবান্ধব সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। রাষ্ট্রের দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা। আইনের শাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু গত সরকারের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসনে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। 

কে এ প্রভাবশালী রায়হান বাদশা?

মধ্যবিত্ত ঘরের রায়হান বাদশার জন্ম উত্তরবঙ্গে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর। স্থানীয় শিক্ষালয় শেষ করে সুযোগ পান রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট)। প্রকৌশলী হয়ে যোগদান করেন সরকারি চাকরিতে। দীর্ঘ ১০ বছর চাকরি করেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জে। বিয়ে করেছেন ওই জেলাতেই। প্রকৌশলীরা তাকে চেনেন গোপালগঞ্জের জামাতা হিসেবে। শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই নূর ই আলম চৌধুরীর (লিটন চৌধুরী)। যিনি গত সংসদের চিফহুইপ ছিলেন। সে লিটন চৌধুরীর আশির্বাদে রায়হান বাদশা গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আসেন। প্রধান প্রকৌশলীর পরের পদেই বসেন। সাংগঠনিকভাবেও তিনি বেশ প্রভাবশালী। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের আহবায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন ২০২২ সালে।  

নতুন দায়িত্ব পাবার আগ পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঢাকা সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন। ১৭ জেলা ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। 

প্রধান প্রকৌশলী হতে এর আগেও রায়হান বাদশা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তদবির করেছেন লিটন চৌধুরীরও। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পান প্রকৌশলী  দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালানোর পর গত ১৩ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন দেলোয়ার মজুমদার। 
এরপর ওইপদে চলতি দায়িত্ব পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেন রায়হান বাদশা। 

দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন রায়হান বাদশা

নির্বাচিত কলেজসমুহের উন্নয়ন(সরকারী ও বেসরকারী) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলজের নতুন ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ ১২ মার্চ ২০০৬ সালে সমাপ্ত হয়। কিন্তু তা হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে বুঝিয়ে না দিয়েই ওই বছরের (১৫ জুন ২০০৬) ঠিকাদারের সঙ্গে যোসাজস করে পুরো বিল ছাড় দেন। এ বিষয়ে তদন্তের পর রায়হান বাদশাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তখন ছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার। 

পরে তার দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দলীয় নেতা হিসাবে সাজা প্রত্যাহার করা হয় রায়হান বাদশার। 

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নালিশ

প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের পদত্যাগের পর রায়হান বাদশা তৎপরতা চালায়। এ নিয়ে সাধারণ ও নিপীড়িত প্রকৌশলীরা ক্ষুব্ধ হয়। স্থানীয় সমন্বয়কারীদের দ্বারস্থ হয়। বিষয়টি অবহিত করতে খোদ শিক্ষা সচিব শেখ আব্দুর রশীদের কাছে যান ক’জন সমন্বয়ক। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের তালিকা থেকে কাউকে কোনো উচ্চতর পদে নিয়োগ না দেয়ার জন্য অনুরোধও জানান।

আরও পড়ুন<<>> ইইডির প্রধান প্রকৌশলী হচ্ছেন আ.লীগ নেতা রায়হান বাদশা!

আন্দোলনে যাবেন বঞ্চিতরা

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আপন দেশকে বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর নিয়ে শিক্ষক, ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চরম ক্ষোভ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশলের ইটপাটকেলেও ঘুষ খায়’এমন কথাও শুনতে হয়েছে আমাদের। এ কথা মেযন ঠিক না তেমনি অস্বীকার করারও উপায় নেই। ঘুষ দেয়া-নেয়া নিয়ে  মারামারির ঘটনাও ঘটেছে এখানে। দলনিরপেক্ষ সরকার এসেছে। এখন প্রয়োজন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে শুদ্ধি অভিযান করা। অতীত সরকারের দলীয় ক্যাডার ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে বঞ্চিত ও দূরদূরান্তে যারা চাকরি করছেন, নানাভাবে শোষিত, তাদের যোগ্য পদায়ন করা। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অমরণ অনশনে যাওয়ার চিন্তা করছে ত্যাগী ও বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়