Apan Desh | আপন দেশ

বিএনপির গঠনতন্ত্রই তারেককে কর্তৃত্ববাদী করে তোলেছে!

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৪৪, ১৬ জুন ২০২৪

আপডেট: ১৮:৫৮, ১৬ জুন ২০২৪

বিএনপির গঠনতন্ত্রই তারেককে কর্তৃত্ববাদী করে তোলেছে!

ফাইল ছবি

বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ ক্ষোভ ঝাড়ছেন আড়ালে, আবড়ালে। বলছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়ে তারেক রহমান দলে ‘একনায়কতন্ত্র’ কায়েম করছেন। আবার কারো অভিযোগ দলের ওপর তার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু বিএনপির গঠনতন্ত্রই তাকে একক কতৃত্ববাদী করে তোলেছে। অসীম ক্ষমতা দিয়েছে। 

গঠনতন্ত্রে বলা আছে, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। গঠনতন্ত্র চেয়ারপারসনকে যেকোনো সময় যেকোনো কমিটি বাতিল করার ক্ষমতা দেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদিত হবে। তারেক রহমান এখন সেই বিধানের দিকেই এগোচ্ছেন। 

দেশের চার মহানগরসহ কয়েকটি কমিটি ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। একদিন পর শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে বড় রদবদল করা হয়েছে। দলের মোট ৩৯ নেতা নতুন পদ পেয়েছেন। এছাড়াও নতুন নামে সাবজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। রদবদলে বিতর্কিতদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রশ্ন করা হলে তাদের সবার কাছ থেকে সাফ জবাব আসছে ‘কমিটির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না’। 

বিএনপির মধ্যম সারির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, তারেক রহমান আসলে দলের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে কমিটি পুনর্গঠন করে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলছেন। ভবিষ্যতে কেউ যাতে তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ না করে, সেজন্য তিনি এটা করছেন। 

দলটির অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপিতে একক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গঠন করা স্থায়ী কমিটিও পাত্তা পায়না। কমিটি নিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তারা। কমিটি ভাঙাগড়া, এক চিঠিতে চার মহাানগর কমিটিশূণ্য করাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের একক নির্দেশে।

আরও পড়ুন<<>> বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশ তৃণমূল কেন মানছে না?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির অনেকেই বলছেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। কিন্তু নিজেরাই একনায়কতন্ত্রের শিকার হচ্ছি। বলতে গেলে পদ তো দূরের কথা সাধারণ সদস্য পদও থাকবে না।’ 

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন। তারেক রহমান এখন সেই বিধানের দিকেই এগোচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র চেয়ারপারসনকে যেকোনো সময় যেকোনো কমিটি বাতিল করার ক্ষমতা দেয় এবং সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদিত হবে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, রদবদলের ফলে তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে সাংগঠনিকভাবে দক্ষদের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। তবে উপদেষ্টার পদ পাওয়া কিছু নেতার ভাষ্য, শাস্তিস্বরূপ তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

কার্যনির্বাহী কমিটি ছাড়াও বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটিও পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটি পশ্চিমা দেশ চীন ও ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে দলের আভ্যন্তরীণ সূত্রে। ওইসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ওই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন।

দলীয় সূত্রমতে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পরপরই দলের কার্যনির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন তারেক রহমান। নতুন সদস্য ও পদ দেয়ার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। তাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুগত তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা এ তথ্য জানান। কাউন্সিলের বিষয়ে ওই নেতা বলেন, পরিবেশ না পাওয়ায় আপাতত কাউন্সিলে চিন্তা নেই দলটির।

কমিটি রদবদলের পরদিন শুক্রবার (১৪ জুন) দলের বঞ্চিত নেতাদের অনেকেই দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আবার কেউ কেউ স্থায়ী কমিটির অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে তারা সবাই বলছেন, কমিটি পুনর্গঠন করা হবে এটুকু জেনেছি কিন্তু কখন, কবে, কাকে প্লাস মাইনাস করা হবে তা জানি না। ওসব নয়া পল্টনে খোঁজ নেয়ার পরামর্শ দেন তারা।

এদিকে নয়া পল্টনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র যুগ্ম মাসচিব, দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত রুহুল কবির রিজভী আহমেদের কাছে বিষয়টি জানার চেষ্টা করেছেন উচ্চ ও মধ্যম সারির নেতারা। তার বক্তব্য, ‘এ সবই হয়েছে শীর্ষ নেতার নির্দেশে করা হয়েছে। তিনি যা করছেন গঠনতন্ত্রের আলোকেই।

২০১৬ সালে দলটির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে ইতোমধ্যে অনেক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। 

বিএনপির গঠনতন্ত্রমতে, প্রতি তিন বছর পরপর কাউন্সিল করতে হবে। তবে এবার কমিটি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেয়া হলো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে। যার স্বাক্ষরে কমিটি ভাঙাগড়া হয়েছে তার কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। এদিকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতা ও সাজার জন্য বাস্তবিকভাবে রাজনীতির বাইরে। 

কমিটি ভাঙ্গাগড়া নিয়ে নীতিনির্ধারকদের একজন জানান, কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়টি পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হয়েছিল। কিন্তু কখন-কীভাবে সেটা করা হবে, তা আমাদের জানানো হয়নি।   

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আগে হয়েছিল, এখন তা কার্যকর করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মধ্য রাতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও বরিশাল সিটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নার নেতৃত্বাধীন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও ভেঙে দেয়া হয়েছে।

জহির উদ্দিন স্বপন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ কয়েকজন নেতাকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

দলের কয়েকজন নেতার মন্তব্য, এ পদে দায়িত্ব দেয়ার মাধ্যমে স্বপন, খোকন, সারোয়ার ও আলালকে আদতে শাস্তি দেয়া হয়েছে। উপদেষ্টা কমিটিকে ‘ডাম্পিং‘ কমিটি হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকেন নেতাকর্মীরা। যে কমিটির কোনো উপদেশই নেয়া হয়না।  

অন্যদিকে আংশিক কমিটি গঠনের প্রায় সাড়ে তিন মাস পর শনিবার (১৫ জুন) ২৬০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল।

আপন দেশ/এবি

 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়