Apan Desh | আপন দেশ

স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে মুমিনের জন্য ৪০ পরামর্শ

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২৩, ১৫ আগস্ট ২০২৪

স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে মুমিনের জন্য ৪০ পরামর্শ

ছবি: প্রতীকি ছবি

মহান আল্লাহর দয়ায় পৃথিবী প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক দূর এগিয়েছে। মানুষের দৈনন্দিন কাজ সহজ করতে বহু প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো কেউ যদি ভালো কাজে ব্যবহার করে, তবে তা কল্যাণকর; আর যদি মন্দ কাজে ব্যবহার করে, তবে তাদের জন্য মন্দ পরিণামের মাধ্যম হবে। এগুলো মূলত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমি পৃথিবীর সব কিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে তাদের মধ্যে কে ভালো কাজ করে। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

স্মার্টফোনও তেমনই একটি ডিভাইস, যার ভালো-খারাপ উভয় দিকই রয়েছে। আমরা চাইলে এর মাধ্যমে প্রচুর গুনাহও করতে পারি, আবার চাইলে বিভিন্ন ইবাদত সহজ করতে এ ডিভাইস ব্যবহার করতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সব কাজ নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

যে যা নিয়ত করবে সে তা-ই পাবে। যার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর জন্য হবে তার হিজরত আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর জন্যই হবে। আর যার হিজরত দুনিয়া পাওয়ার জন্য বা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার জন্য হবে, তার হিজরত সে জন্যই হবে যে জন্য সে হিজরত করেছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৯৫৩)

তাই মুমিনের উচিত স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তার ইতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করা, নেতিবাচক বা গুনাহের দিকগুলো বর্জন করা।

নিম্নে স্মার্টফোনের এ রকম কিছু ইতিবাচক ব্যবহার তুলে ধরা হলো-

১. যোগাযোগ রক্ষা: স্মার্টফোনে পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ রাখা যায়। যা সম্পর্ক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিয়ামতের দিন আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব (সম্পর্ক) স্থাপনকারীদের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেয়া হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

২. কম্পাস: স্মার্টফোনের কম্পাস ব্যবহার করে অচেনা জায়গায় কিবলা নিশ্চিত হওয়া যায়।

৩. নামাজের সময়সূচি: স্মার্টফোনে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপের মাধ্যমে নামাজের সময়সূচি, মাকরুহ সময় ইত্যাদি জানা যায়।

৪. সাহরি-ইফতারের সময়সূচি: এর মাধ্যমে সাহরি ও ইফতারের সময়সূচিও খুব সহজে জানা যায়।

৫. উমরি কাজা: স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিগত দিনের ছুটে যাওয়া নামাজগুলোর কাজার হিসাব রাখা যায়। এ বিষয়ে অনেক অ্যাপও আছে।

৬. হজ ও ওমরাহর রেজিস্ট্রেশন: বর্তমান যুগে হজ-ওমরাহ রেজিস্ট্রেশন করতেও স্মার্ট অ্যাপের প্রয়োজন হয়।

৭. দৈনন্দিন জিকির: স্মার্টফোনে ইসলামিক ক্লিক কাউন্টার অ্যাপ ব্যবহার করে জিকির করা যায়।

৮. কোরআন তিলাওয়াত: স্মার্টফোনের মাধ্যমে এখন খুব সহজেই কোরআন তিলাওয়াত, তাফসির, হাদিস, ইসলামিক বই-পুস্তক পড়া যায়।

৯. অ্যালার্ম: স্মার্টফোনের অ্যালার্ম সিস্টেমের মাধ্যমে খুব সহজে তাহাজ্জুদ ও ফজরের অ্যালার্ম দেয়া যায়, যা মানুষকে রাত্রিকালীন ইবাদতে সাহায্য করতে পারে।

১০. ই-মেইল পরিচালনা: স্মার্টফোনের মাধ্যমে অফিশিয়াল ও ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবস্থাপনা করা যায়। বিভিন্ন ইসলামিক সাইটে রেজিস্ট্রেশন ও বিভিন্ন ইসলামিক অ্যাপ ডাউনলোড করতে একটি ই-মেইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১১. ইন্টারনেট ব্রাউজিং: স্মার্টফোনের ইসলামিক তথ্য অনুসন্ধান ও শিক্ষামূলক কনটেন্ট সংগ্রহ সহজ করতে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করা যায়। এটাও তার একটি ইতিবাচক ব্যবহার।

১২. শিক্ষা: ইসলামিক অনলাইন কোর্স ও ই-লানিং অ্যাপের মাধ্যমে ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সাইটগুলোর পরিচালকরা বিশুদ্ধ আকিদা পোষণ করেন কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।

১৩. ই-বুক পড়া: পবিত্র কোরআন, ইসলামিক ই-বুক ও অডিও বুক শোনা বা পড়া যায় স্মার্টফোনের মাধ্যমে।

১৪. স্বাস্থ্য ট্র্যাকিং: মুসলিম শরিফের ৬৬৬৭ নম্বর হাদিসে আছে, সবল ঈমানদার আল্লাহর কাছে দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় বেশি পছন্দনীয়। তাই মুমিনের উচিত তার ফিটনেসের ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফিটনেস অ্যাপ ও স্মার্ট ওয়াচের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা যায়।

১৫. সোশ্যাল মিডিয়া: স্মার্টফোন ব্যবহার করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফরমে দ্বিন প্রচার করার সুযোগ রয়েছে।

১৬. ম্যাপ ও নেভিগেশন: স্মার্টফোন ব্যবহার করে গুগল ম্যাপস বা অন্যান্য নেভিগেশন অ্যাপের মাধ্যমে রুট অনুসন্ধান করা যায়। কোনো অপরিচিত জায়গায় সময়মত নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও এটি মসজিদ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অমুসলিম দেশে হালাল খাবার পরিবেশনকারী দোকান সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।

১৭. ক্যালেন্ডার ও রিমাইন্ডার: স্মার্টফোনে সময়সূচি ও গুরুত্বপূর্ণ দিনের নোটিফিকেশন সেট করা যায়। এর মাধ্যমে আমরা সাপ্তাহিক ও মাসিক নফল রোজাগুলোর কথা মনে রাখতে পারি।

১৮. ভ্রমণ পরিকল্পনা: স্মার্টফোন ব্যবহার করে টিকিট বুকিং ও ট্রিপ প্ল্যান করা যায়। ফলে আমরা সুন্নতের নিয়তে আত্মীয়দের দেখতে যাওয়া, তাবলিগে যাওয়া কিংবা হজ ওমরায় যেতেও এ সেবা নিতে পারি।

১৯. ইসলামিক অ্যাপ ব্যবহার: স্মার্টফোন ব্যবহার করে বহু ধরনের ইসলামিক অ্যাপ ব্যবহার করা যায়, যেগুলো ইসলাম শিখতে ও আমল করতে সহায়ক হয়।

২০. বিনোদন: স্মার্টফোন ব্যবহার করে একেকজন একেকভাবে বিনোদন উপভোগ করতে পারে। মুমিনরাও এর মাধ্যমে বিশ্ববিখ্যাত কারিদের তিলাওয়াত শুনতে পারে, ইসলামিক নাশিদ শিল্পীদের ইসলামিক নাশিদ শুনে সুস্থ বিনোদন পেতে পারে।

২১. নোট নেয়া: বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে নোট ও আইডিয়া সংরক্ষণ করা যায়। জরুরি দোয়া কিংবা মাসআলা-মাসায়েল ইত্যাদিও এতে সংরক্ষণ রাখা যায়।

২২. ক্যামেরা স্ক্যানার: এর মাধ্যমে আমরা নিজেদের জরুরি ডকুমেন্ট স্ক্যান ও ডিজিটাইজ করার পাশাপাশি ইসলামিক বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ইত্যাদিও স্ক্যান করে নিজের কাছে রাখতে পারি। অন্যদের মধ্যে শেয়ার করতে পারি।

২৩. অনলাইন পেমেন্ট: স্মার্টফোন ব্যবহার করে মোবাইল ওয়ালেট ও পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়। এটি ব্যবহার করে আমরা আমাদের অনগ্রসর নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আর্থিক সহযোগিতা পাঠাতে পারি।

২৪. ক্লাউড স্টোরেজ: স্মার্টফোন ব্যবহার করে ড্রপবক্স, গুগল ড্রাইভের মতো ক্লাউড স্টোরেজে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইগুলো সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। যাতে যেকোনো জায়গায় বসে কোনো তথ্যসূত্র বের করার প্রয়োজন হলে সাহায্য নেয়া যায়।

২৫. মিটিং ও ভিডিও কল: স্মার্টফোনের সাহায্যে জুম, গুগল মিট বা অন্যান্য প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ইসলামিক মিটিং করা যায়। কোরআন-হাদিসের ক্লাস পরিচালনা করা যায়। ভার্চুয়াল বয়ানের মজলিস করা যায়। 

২৬. ভাষা শেখা: দ্বিন প্রচারের জন্য ভাষা জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্টফোন ব্যবহার করে সহজে ডুওলিংগো বা অন্যান্য ভাষা শেখার অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।

২৭. টাস্ক ম্যানেজমেন্ট: স্মার্টফোনের টুডু লিস্ট বা টাস্ক ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে দৈনন্দিন পরিকল্পনামাফিক আমল করা যায়।

২৮. ক্রিয়েটিভ লেখালেখি: ব্লগিং বা অন্যান্য লেখালেখি প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে ইসলাম প্রচার করা যায়।

২৯. ভাষা অনুবাদ: বিদেশি ইসলামিক ওয়েবসাইট বা বই পড়ার সময় গুগল ট্রান্সলেট বা অন্যান্য ভাষা অনুবাদক অ্যাপ ব্যবহার করে জ্ঞান আহরণ করা যায়।

৩০. ভয়েস রেকর্ডিং: ভয়েস রেকর্ডার ব্যবহার করে ইসলামিক কনটেন্ট তৈরি বা সংরক্ষণ রাখা যায়।

৩১. ভিডিও এডিটিং: ভিডিও এডিটিং অ্যাপ ব্যবহার করে ইসলামিক ডকুমেন্টারি বা কনটেন্ট তৈরি করা যায়।

৩২. স্ব-উন্নয়ন:  নিজের চিন্তা-চেতনাকে উন্নত করতে বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারের মোটিভেশনাল এবং স্ব-উন্নয়নমূলক কনটেন্ট দেখা ও শোনা যায়।

৩৩. বারকোড স্ক্যানার: স্মার্টফোনের বারকোড স্ক্যান করে পণ্যটি হালাল কি না তা যাচাই করা যায়, বিশেষ করে অমুসলিম দেশের সফরে এটি খুবই উপকারী হতে পারে।

৩৪. গবেষণা: কোনো হাদিস বা মাসআলার রেফারেন্স ঠিক আছে কি না তা স্মার্টফোনের মাধ্যমে খুব দ্রুত চেক করা যায়।

৩৫. ক্রিয়েটিভ আর্ট: স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে সুন্দর সুন্দর ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি অঙ্কন করা যায়।

৩৬. ট্রাফিক আপটেড: ভ্রমণে বের হওয়ার আগে রাস্তার অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেয়া সুন্নত। স্মার্টফোনের মাধ্যমে গুগল ট্রাফিক বা এজাতীয় অ্যাপ ব্যবহার করে সহজে রাস্তার অবস্থা জানা যায়।

৩৭. ভার্চুয়াল সফর: স্মার্টফোনের মাধ্যমে খুব সহজে ইসলামের ঐতিহাসিক জায়গাগুলো ভার্চুয়ালি সফর করে দেখা যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ৩৬০ ডিগ্রি মুডে জায়গাগুলো ঘুরে দেখার ব্যবস্থা আছে।

৩৮. ইসলামিক নাম: স্মার্টফোন ব্যবহার করে সন্তানের জন্য সুন্দর ইসলামিক নাম অর্থসহ বের করা যায়।

৩৯. জাকাতের হিসাব: স্মার্টফোনের নির্ভরযোগ্য অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজে জাকাতের হিসাব বা উত্তরাধিকার সম্পদের হিসাব বের করা যায়।

৪০. অনলাইন ফতোয়া: স্মার্টফোন ব্যবহার করে বিশ্বের বড় বড় ফতোয়া বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্বিনি যেকোনো মাসআলার সমাধান পাওয়া যায়।

মহান আল্লাহ আমাদের তার প্রতিটি নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার ও গুনাহ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।

আপন দেশ/এইউ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়