Apan Desh | আপন দেশ

নিষিদ্ধ জামায়াতের নীরবতায় পাল্টে গেল অঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ২ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ১৩:৪০, ২ আগস্ট ২০২৪

নিষিদ্ধ জামায়াতের নীরবতায় পাল্টে গেল অঙ্ক

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির এখন নিষিদ্ধ সংগঠন। দশ বছর আগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে আদালত। ১ আগষ্ট নির্বাহী আদেশে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ ইস্যুতে মানুষেরে মনে ভীতি ছিল। শুধু সাধারণ মানুষই নয়; সরকারও সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকানোর ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল।

কারফিউতে ইতোমধ্যে মাঠে সেনাবাহিনী। আর নিষিদ্ধের ঘোষণার দিন ও পরের দিন মাঠে দেখা গেছে শাসক দলের নেতাকর্মীদেরও।

নিষিদ্ধ হয়ে জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে কোনো সহিংসতা হলে- তা দমনের সক্ষমতা সরকারের রয়েছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা বলেছেন, নিষিদ্ধ হবার পর মরণকামড় দিবে জামায়াত-শিবির। তাই রাজপথে অবস্থান নিতে হবে।

৩১ জুলাই নারায়নগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান বলেছেন, জামায়াত এবং শিবিরকে বাংলাদেশে ব্যান করা হবে।  ওরা ওদের মরণকামড় দেয়ার চেষ্টা করবে। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনেন, আজকের রাত স্বাভাবিক রাত না। সাইনবোর্ড, চিটাগংরোড ওইসব এলাকায় যারা আছেন, আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন। মরার জন্য কিন্তু কেউ প্রস্তুত থাকবেন না। 

সে হিসাবটা পাল্টে গেছে নিষিদ্ধ সংগঠনের শীর্ষ নেতার একটি বিবৃতিতেই। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ধৈর্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

গণমাধ্যমে শুধু বিবৃতি দেয়া ছাড়া আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দলটি। সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত এ ইস্যুতে আপাতত মাঠের কোনো কর্মসূচিতে যাবে না।

চলমান ছাত্র আনেদালনে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ ঘোষণা তাদের জন্য একটি ফাঁদ বলে মনে করে দলটির নীতিনির্ধারকরা। তারা যদি প্রতিক্রিয়া দেখায় বা রাজপথে কর্মসূচি পালন করে তাহলে সরকার চলমান ছাত্রদের আন্দোলন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিবে। 

জামায়াত নেতাদের দাবি, কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরকার অনেক শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছেন যেখানে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মী নিহত হননি। 

কোটা আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডিএমপি ২৪৩ মামলায় ২৬৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ২২৮৪ জনের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিএনপির নেতাকর্মী ২৬৯ জন, জামায়াত ও শিবিরের ৭৩ জন।

নেতারা মনে করেন সরকার যা করেছে তাতে জামায়াত জনগণের আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। 

নিষিদ্ধ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এ অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ‘ভিন্নখাতে’প্রবাহিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি। বলেন, সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এ গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।

পৃথক বিবৃতিতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকারের এই হাস্যকর সিদ্ধান্ত ছাত্রশিবিরসহ দেশের ছাত্রসমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

এদিকে জোট নেতা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, জামায়াত নিষিদ্ধ অসাংবিধানিক। তার দল বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। 

উল্লেখ্য, নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতের গত তিনটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ছিল না। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বেশির ভাগ কার্যালয়ই বন্ধ অনেক বছর ধরে। দুই একটি ব্যতিক্রম ছাড়া এতদিন জামায়াত-শিবিরকে প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিও পালন করতে দেয়া হয়নি। কার্যত অনেকটা নিষিদ্ধই ছিল দলটি।

আপন দেশ/পিএ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়