Apan Desh | আপন দেশ

আটশ পুলিশকে খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১০:২৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আটশ পুলিশকে খুঁজছে পুলিশ

ফাইল ছবি

নিজবাহিনীর প্রায় ৮০০ পুলিশকে খুঁজছে পুলিশ। তাদের অবস্থান নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। খোদ পুলিশের মধ্যেই আছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন, তারা একটি বিশেষ বাহিনীর হেফাজতে আছেন। কারও দাবি, তারা প্রশাসনের সহায়তায় দেশ ছেড়েছেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে গিয়ে বিতর্কিত ছিলেন পুলিশের বেশকিছু শীর্ষ কর্মকর্তা। আন্দোলনকারীদের হয়রানি, সমন্বয়কদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ নির্বিচারে গুলি করে শতশত ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশদাতা বিতর্কিত এসব কর্মকর্তা এখন লাপাত্তা।

গাঢাকা এসব কর্মকর্তার মধ্যে আছেন সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এসব কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। 

তারা কোথায় আছেন। কেন আইনের আওতায় আসছেন না। সে বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি অপারেশনস মো. রেজাউল করিম বলেন, যাদের খুঁজে পাচ্ছি, তাদের গ্রেফতার করছি। বাকিদের (পলাতকদের) অবস্থানের বিষয়ে জানলে তো ধরে ফেলতাম।

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য শীর্ষ কর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় আট শ পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেননি। কয়েক দফায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হলেও কোনো হদিস নেই এসব সদস্যের। তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই পুলিশ সদর দফতরের কাছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুলিশে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল সাবেক এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলামের। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসুদপুরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় পুলিশে অঘোষিত ডন ছিলেন তিনি। তার কথার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না তৎকালীন আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন। 

অভিযোগ আছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে পুলিশে কট্টর আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের  নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক ও দিকনির্দেশনা দিতেন মনিরুল ইসলাম। ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশ সদর দফতর থেকে শীর্ষ যে কর্মকর্তাদের হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নেয়া হয়, মনিরুল ইসলামও সেখানে ছিলেন। পরে চাকরিচ্যুত হন তিনি। মনিরুলের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনো তাকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ। বিসিএস ২০তম ব্যাচের কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের বাসিন্দা হারুন নিজেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির নাতি পরিচয় দিতেন। হারুনের ভাতের হোটেল দেশব্যাপী বহুল সমালোচিত। এ কর্মকর্তা আন্দোলন দমাতে সমন্বয়কদের হেফাজতে নেয়া, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। 

সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেওয়াল টপকে বের হয়ে লাপাত্তা হন তিনি। তার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা গুঞ্জন রটেছে। তিনি হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন-এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। আবার তিনি সীমান্ত পারি দিয়ে দেশ ছেড়েছে-এমন তথ্যও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টি হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে ঢাকা মহানগরে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশেই ডিএমপির আটটি বিভাগের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। বিসিএস ১৭ ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে। ৫ আগস্ট বিকালে তিনিও একটি বাহিনীর হেলিকপ্টারে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নিরাপদ স্থানে যান। এরপর থেকে তারও কোনো হদিস নেই। 

এরই মধ্যে অর্ধশত হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন তিনি। কিন্তু তাকে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেনি। ডিএমপির যুগ্মকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারও ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে কঠোর অবস্থান নেন। ২১ ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদরে। তিনি ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তিনি মাঠ পুলিশকে ব্যাপক চাপ দেন বলে অভিযোগ আছে। 

পুলিশের এ কর্মকর্তাও ৫ আগস্টের পর থেকে লাপাত্তা। তবে তিনি এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৩৫টি হত্যা মামলা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। 

সাবেক সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান জঙ্গি দমনে আলোচিত কর্মকর্তা। বিসিএস ১৮ ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে। আওয়ামী লীগের শেষদিকে জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীকে আটক করে জঙ্গি বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সিটিটিসির একাধিক দল অভিযান চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫টি হত্যা মামলা রয়েছে। তবে তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন বিতর্কিত অন্তত ২৫ কর্মকর্তা এখনো লাপাত্তা।

আপন দেশ/কেএইচ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়