Apan Desh | আপন দেশ

শেখ হাসিনা পালানোর বিষয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:১৪, ২৮ আগস্ট ২০২৪

আপডেট: ২০:২২, ২৮ আগস্ট ২০২৪

শেখ হাসিনা পালানোর বিষয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আগে জানা ছিল না সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের। সোমবার (৫ আগস্ট) পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যখন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন ঠিক তখন তাকে জানানো হয় শেখ হাসিনা চলে যাচ্ছেন। তবে, শেখ হাসিনা দেশে থাকলে তার জীবনের ঝুঁকি ছিল। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত ছিল। 

ইউটিউব চ্যানেল ‘নাগরিক টিভি’ তে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনেতো মিটবে না। 

শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেয়া ঠিক ছিলো নাকি তাকে দেশে রেখে বিচার করা উচিত ছিলো এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই সময়ে একটি উত্তপ্ত মুহূর্তে তাকে ওখানে রেখে দিলে সমস্যা হতো। আর প্রথম কথা হচ্ছে, আমিতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তখন আমাকে কিছু ব্যক্তি বলেছে যে, উনিতো চলে যাচ্ছেন। উনি অলরেডি রান। তো এটা আমি জানতাম না যে, তিনি দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। তারপরও আমি মনে করি যে, উনি দেশে থাকলে ওনার জীবন ঝুঁকি হতে পারতো। কেউ চাইবে না যে একজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হোক। এটা মোটেই কাম্য না। পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত ছিলো। 

সেনাবাহিনীর রদবদল প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনেক ইস্যু আছে। যেগুলো তদন্ত হচ্ছে। এজন্য আমরা সময় নিচ্ছি, প্রমাণ লাগবে, প্রমাণিত না হলে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এ কাজটি একটু ধীর প্রক্রিয়ায় চলছে। এখন দেখা যাক, বেশকিছু জিনিস আছে যেটা আমাদের করতে হবে। 

সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফেরার প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, আমরাতো যেতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেতে চাই। তবে সম্ভবত আমাদের আরো কিছুকাল থাকতে হবে। কারণ পুলিশ এখনো তাদের দায়িত্ব নেয়ার মত অবস্থায় নাই। পুলিশ প্রায় অকার্যকর হয়ে গিয়েছিলো। এখনো দায়িত্ব নেয়ার মত হয়নি। তারা দায়িত্ব নেয়ার মত হলে অবশ্যই আমরা ফেরত চলে যাবো।

আনসার বাহিনীর পরিস্থিতি নিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, এটাকে আমরা অবশ্যই কাউন্টার কোড করছি। যেমন আরএবিতে এমন একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিলো। আমরা তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। অনেকে এখন নানা ধরনের কষ্টের মধ্যেই আছে। তারপরও আমাদের ধৈর্য্য ধরে এগুলো সমাধান করতে হবে। আনসারের ওটা আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। নাইন ডিভিশন কাজ করেছে। আনসারদের নিবৃত করেছে। 

সেনাপ্রধান আরও বলেন, আমি আশাবাদী সবাই একসঙ্গে যদি কাজ করি তাহলে দেশ সংস্কার করা সম্ভব হবে। আমরা একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে সম্ভব হবো। আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আমিও তাদের সঙ্গে আছি কাজ করছি। এ সরকারকে সাহায্য করছি। আমরা সে লক্ষ্যে যাবো, যেতে হবে। কারণ এখান থেকে ফেরত যাওয়ার কোন অবকাশ নেই। জনগণকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। প্রথম কথা হচ্ছে অনেক ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি চলছে। যত সংবাদ তারা পায়, আমার দেখা মতে তা ৯৫ শতাংশই মিথ্যা। সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে এ সমস্ত সংবাদ পরিবেশন করা হয়। এটা মানুষকে একটি ভুল ধারণা দেয়। আমি বলবো মানুষকে ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে। 

গণমাধ্যমের কাজ সর্ম্পকে তিনি বলেন, অনেকেই করছে, অনেকেই দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করছে। তারা এ ধরনের সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে সংবাদ প্রচার করছে না। তারপরেও তাদেরকে আরো কাজ করতে হবে। আমি নিশ্চিত যে তারা আরো কাজ করবে। সময় পেলে আস্তে আস্তে মিডিয়াটাও আরো সক্রিয় হবে। প্রথমত বিষয়টি হচ্ছে আমাদের আরো ধৈর্য্য ধরতে হবে। এ ১৬ বছরের জঞ্জাল ১৬ দিনে মিটবে না, ১৬ মাসেও যদি আমরা মেটাতে পারি সেটা অবশ্যই একটি ভাল বিষয় হবে। অনেক সমস্যা হয়েছে, বুরোক্রেসির মধ্যে সমস্যা, পুলিশের মধ্যে সমস্যা। সবদিকেই সমস্যা। তো এগুলোকে সমাধানে একটু সময় দিতে হবে। এ সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা যদি অধৈর্য্য হয়ে যাই, তাহলে অবশ্যই এটা ঠিক হবে না। এ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছি। 

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি যে সরকার যখন থাকে তার সঙ্গে কাজ করে। এর অর্থ এই না যে সবাই স্বৈরাচারকে সহায়তা করেন। স্বৈরাচার হোক আর যাই হোক, দৈনন্দিন কাজতো তাদের করে যেতে হবে। সে কাজ তারা করেছে। কিছু ভাল করেছে। কিছু খারাপ করেছে। কিন্তু এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যাবে না। সবাইকে এভাবে সিল দিয়ে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, এটা ঠিক নয়। অবশ্যই যারা দোষী তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। আতঙ্ক সৃষ্টি করলে এ প্রশাসনও কাজ করবে না। কেউ কাজ করবে না। সবাই ভীত থাকবে। যেমন পুলিশের মধ্যে এমন একটি সমস্যা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একটি বিশাল ট্রমা কাজ করছে। কাজেই এ ট্রমা যদি বিরাজ করে তাহলে হবে না। তাদের এ ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে। এজন্য একটু সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। ইনশাআল্লাহ এ সরকার আস্তে আস্তে সবকিছু সামাল দিয়ে উঠবে।

আপন দেশ/কেএইচ

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়