মিথ্যাচারের বিরোদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

মিথ্যাচারের বিপক্ষে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নেয়ার আহবান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারের ভুল, ব্যর্থতা-বিচ্যুতি থাকলে অবশ্যই তুলে ধরুন। কিন্তু যারা মিথ্যা, অর্ধসত্য বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে তদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন।

শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। 

এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্পী সমাজ, নাগরিক সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সবাই অসত্যগুলোর প্রতিবাদ করুন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঠিক তথ্য দেয়া হবে। যারা অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিপক্ষে আপনারা শক্ত অবস্থান নেন।

বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গে বলেন, অপপ্রচারকারীরা বলছে বাংলাদেশের বুক চিরে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভারতে ট্রেন যাবে। এখান দিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে, যেটি ডাহা মিথ্যা কথা।

এ প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন বলেন, সমঝোতা স্মারকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে একটা রিজিওনাল কানেক্টিভিটি আমরা করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের ৫০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে। আমরা রফতানি করি। বাংলাদেশের পণ্য ভারত হয়ে নেপাল-ভুটানে প্রবেশ করে। আমরা যদি সরাসরি ট্রেন লাইন করতে পারি, তাহলে আমাদের ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

তিনি বলেন, ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনছি। এ মুহূর্তে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা হলেও নেপালে ৭২ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। চাহিদা নেই বলে তারা এখন উৎপাদন করে না। আমরা নেপাল থেকে ক্লিন এনার্জি আনতে পারলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে পারব। যেটা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালপসহ গোটা পৃথিবীর জন্য ভালো, সেটা কিভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়? 

চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান, প্রণোদনা দিতে চান। আমরা চাই প্রণোদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভালো চলচ্চিত্র যাতে নির্মাণ হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যা কিছু করতে হয় করব। গুণগতমানের দিকে মনোযোগ দিতে চাই। এ জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করা হবে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিতদের প্রণোদনা দেয়া হবে সেটি নয়, নতুনদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই, তারা যাতে সুযোগ পেয়ে নিজেদের দাঁড় করাতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনুদানের চলচ্চিত্র নিয়ে একটি চলচ্চিত্র উৎসব করা যায় কিনা সেটিও বিবেচনা করা হবে। সরকারি অনুদান যেটা প্রণোদনের আকারে দেয়া হচ্ছে এটা সংশ্লিষ্টদের একটা সক্ষমতার স্বীকৃতি। অনুদানের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ হয়ে গেলে সেগুলো নিয়ে একটি অ্যাওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটিও সরকার বিবেচনা করবে। এটি সৃজনশীল নির্মাতাদের আরও উৎসাহিত করবে। চলচ্চিত্র নিয়ে গবেষণার বিষয়টিও এক্ষেত্রে পর্যালোচনা করা হবে।

মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরা ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য চলচ্চিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য চলচ্চিত্রকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে আরও মনোযোগ দেয়ার জন্য আলাদা বিভাগ বা কাউন্সিল করার বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে। দেশের চলচ্চিত্রের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি, এফডিসি এবং যেখানে বিনিয়োগ করতে হয় সরকার সেটা করবে। একইসঙ্সাগে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি পাকিস্তানের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বাজার আমরা ধরতে চাই।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্যসহ মোট ২৬টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। এর জন্য ১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান প্রদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় ২টি, শিশুতোষ শাখায় ২টি, প্রামাণ্যচিত্র শাখায় ২টি এবং সাধারণ শাখায় ১৪টি চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান দেয়া হয়েছে। অপরদিকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শাখায় ২টি, শিশুতোষ শাখায় ১টি এবং সাধারণ শাখায় ৩টি চলচ্চিত্র নির্মাণ অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সভায় সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. কাউসার আহাম্মদ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ, সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অনুদান কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, চলচ্চিত্র অনুদানের স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার এবং স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটির সদস্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ফাল্গুনী হামিদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আপন দেশ/এমবি/এবি