Apan Desh | আপন দেশ

কৃষ্ণকান্তের উইল: বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কৃষ্ণকান্তের উইল: বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি

ছবি: সংগৃহীত

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের একটি অমর নাম। যার রচনা কৃষ্ণকান্তের উইল বাংলা সাহিত্যের একটি মূল্যবান সংযোজন। এ উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালে। এখানে কৃষ্ণকান্তের জমির ভাগ নিয়ে রোহিনী, ভ্রমর এবং গোবিন্দলালের ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী বর্নিত হয়েছে। এটি বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যিক দক্ষতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

উপন্যাসের প্রেক্ষাপট ও গল্প

কৃষ্ণকান্তের উইল একটি সামাজিক উপন্যাস। যা ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। উপন্যাসটির কেন্দ্রবিন্দু কৃষ্ণকান্ত। একজন ধনাঢ্য জমিদার। যার মৃত্যুর পর তার উইল নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ উইলটি সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন উত্থাপন করে।

প্রধান চরিত্র ও তাদের ভূমিকা

উপন্যাসটির নাম কৃষ্ণকান্তের উইল হলেও, তিনি এখানে মুখ্য চরিত্র না। আসলে এরকম উপন্যাসে বাহ্যিক বিচরণগুলো দেখিয়ে মূলটাকে লুকিয়ে রাখা হয়। এখানে মুখ্যচরিত্র কে তা বলা মুশকিল। আসলে কেউই আলাদাভাবে এখানে মুখ্য নয়। কৃষ্ণকান্ত চরিত্রের মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও বৈষম্য তুলে ধরেছেন। কৃষ্ণকান্তের উইলে তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিবাদ সৃষ্টি হয়। এটি তাদের চরিত্র ও মনোভাবের প্রতি গভীর আলোকপাত করে।

সামাজিক ও সাহিত্যিক বিশ্লেষণ

বঙ্কিমচন্দ্র এ উপন্যাসের মাধ্যমে ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সমাজের দুর্বলতা এবং অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলির প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করেন। তার সাহিত্যিক দক্ষতা ও মননশীলতার মাধ্যমে তিনি সমাজের নানা স্তরের মানুষের জীবন ও চিন্তাধারা তুলে ধরেন। কৃষ্ণকান্তের উইল শুধু একটি কাহিনী নয়। বরং এটি একটি সমাজ সচেতনতার ক্যানভাস। এটি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

জমিদার কৃষ্ণকান্ত তার সারাজীবনের জমানো অর্থ মরার আগে পুত্র-কন্যাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান। কিন্তু তার বড়পুত্র হরলাল এ ভাগবাটোয়ারা বর্জন করে নতুন উইল করার ফন্দি আঁটে। এ পর্যন্ত ঘটনার শুরু। 

বাকি গল্প নতুন চরিত্রের দ্বারা বলা হয়। কৃষ্ণকান্তের ভাগ্নে গোবিন্দলাল, তার স্ত্রী কালো-কুৎসিত ভ্রমর, সুন্দরী বিধবা রোহিণী। কাহিনী বাকি ঘটনাগুলো তাঁদের প্রেম অভিমান ঘিরেই গড়ে উঠেছে।

যাইহোক, এত বড় উপন্যাস পড়া কিছুটা সমস্যা হতে পারে। কারণ লেখক সাধু ভাষায় লিখেছেন। প্রথম দিকে এটাকে সাধারন উপন্যাস বললেই চলে। । কিন্তু আসল রহস্যটা থাকে শেষের দিকে। এখানে, নায়ক আর খলনায়ক আলাদা নয় বরং একজনই। কে সে? আর, কার কাছেই বা গেলো কৃষ্ণকান্তের সম্পত্তি? কিভাবে উইলের ঘটনা থেকে প্রেম, আবার প্রেমের থেকে ত্যাগ হলো?

কৃষ্ণকান্ত তার দুই ছেলেকে তিন আনা। তার স্ত্রী ও মেয়েকে এক আনা। তার ভাগ্নে গোবিন্দলালকে আট আনা দিয়ে উইল করেন। যার চরিত্র ভালো বলে জানা যায়। যাইহোক, তার স্ত্রী ভ্রমর থাকা সত্ত্বেও, রোহিণীর প্ররোচনায় গোবিন্দলাল প্রেমে পড়ে। এদিকে ভ্রমর বাবার অসুস্থতার জন্য তার বাবার বাড়িতে গেলে পালিয়ে যায় তারা। পরে কৃষ্ণকান্ত রেগে ভ্রমরের নামে আট আনা উইল করে দেয়। এরপর রোহিণীকে দেখা যায় চরিত্রহীনা হিসেবে। কেননা সে আবার নিশাকরের প্রেমে পড়ে যায়। গোবিন্দলাল ফিরে এসে দেখেন স্ত্রী তার দুঃখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। পরে সে গৃহত্যাগ করে ১২ বছর পর এক ঝলক বাড়ি এসে চিরতরে হারিয়ে যায় ভ্রমরের শোকে।

কৃষ্ণকান্তের উইল একটি ক্লাসিক বাংলা উপন্যাস যা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক প্রতিভার প্রমাণ। এটি বাংলা সাহিত্যের এক অমর সৃষ্টি। এর মাধ্যমে পাঠকরা ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সমাজের একটি গভীর চিত্র উপলব্ধি করতে পারেন।

আপন দেশ/অর্পিতা

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়