Apan Desh | আপন দেশ

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান 

মো. আমির হোসেন

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৪ জুন ২০২৪

আপডেট: ২০:০৯, ২৪ জুন ২০২৪

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান 

ছবি: আপন দেশ

কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম পরিচয় তিনি কবি। তিনি গীতিকার, সুরকার, সৈনিক, অভিনেতা এবং বহু অভিধায় ভূষিত। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তার রক্তের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি জন্মেছিলেন ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। 

বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। তাকে মুসলিম কবি হিসেবে ইসলামি ফাউন্ডেশন মূল্যায়ন করে। কিন্তু ইসলাম ধর্মে জন্ম নিলেও তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। প্রমিলার সঙ্গে সংসার করেও স্ত্রীকে ধর্মান্তরিত করেননি। মুসলমানদের কূপমন্ডুকতা দেখে লিখেছেন, "বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে আমরা তখনও বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি ফিকাহ ও হাদিস চষে।" 

বিদ্রোহী কবিতার কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বললেও তিনি মূলত সাম্যের কবি, প্রেমের কবি। "গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছ সব-বাধা ব্যবধান।" (সাম্যবাদী) নজরুল তৎকালীন শাসক ইংরেজদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, "আমি বিধাতার বুকে এঁটে দেই পদচিহ্ন।" (বিদ্রোহী) তার "আনন্দময়ীর আগমনে" শ্রেষ্ঠ প্রতিবাদ। তিনি সাহিত্য সাধনায় এনেছেন বিপ্লব। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, সিন্ধু হিন্দোল চমৎকার রচনা! ঝিলিমিলি, পুতুলের বিয়ে নাটক। তিনি অভিনেতাও ছিলেন।

তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ  করেছেন,"শুধু মুসলমানের জন্য আসেনি ক ইসলাম" (আমরা সেই সে জাতি)। সাম্যের গান গাই-যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান।(মানুষ) 

নজরুলের প্রবন্ধগ্রন্থ 'রুদ্রবাণী' 'যুগবাণী' ইত্যাদি। তিনি ছিলেন নির্ভিক। তিনি বিশ্বাস করতেন হিন্দু-মুসলিম এক হলে ইংরেজদের তাড়ানো সম্ভব। অনেকেই রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুলের দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ টানেন। কিন্তু নজরুল রবীন্দ্রনাথকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করতেন। রবীন্দ্রনাথ তার 'বসন্ত' নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে।" নজরুল সেখানে বলেছেন,"লাথি মার ভাংরে তালা যত সব বন্দীশালা আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা।" নজরুল বিদ্রোহে ছিলেন দুঃসাহসী।

আরও পড়ুন>>> কবিগুরুর সৃষ্টিজুড়েই না পাওয়ার বেদনা

নজরুলের শাশুড়ি গিরিবালা দেবী ছিলেন ব্রাহ্মণের মেয়ে। একই বাড়িতে থাকতেন তারা। মৌলবাদী স্বভাবের এই শাশুড়িকে খুশি রাখার জন্য কীর্তন ও শ্যামা সঙ্গীত লিখলেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জনপ্রিয় কীর্তনগুলো নজরুলেরই লেখা। মহাকালের কোলে এসে, বলরে শ্যামা বল, অরুণকান্তি কেগো?- বিখ্যাত শ্যামা সঙ্গীতের একাংশ। সখি সাজায়ে রাখ লো পুষ্প-বাসর, সখি সে হরি কেমন বল? এরকম বহু বহু ভজন কীর্তন নজরুলের সৃষ্টি। 

তখন মুসলিমগণ তাকে নাস্তিক বলতে শুরু করলে তিনি লিখেন ইসলামি গান। আমি আল্লা নামের বীজ বুনেছি, রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই। নজরুল হয়ে উঠলেন মুসলিম। তার প্রথম ছেলের নাম কৃষ্ণ মোহাম্মদ বাধা হলো না। এক্কেবারে তিনি হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। মুসলিমদের চোখের মণি। ১৯৭৬ সালে মানুষ নজরুলের মৃত্যুর পরে তাকে মাটি দেয়া হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে। অথচ এ নজরুল বেঁচে থাকতে নিষিদ্ধ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায়। যদিও লেখক নজরুলের মৃত্যু হয়েছিল ১৯৪১ সালে।

নজরুলের গানের ভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ। তিনি প্রায় চার হাজার গান রচনা করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। তার কয়েক শ গান মাত্র শুনতে পাই। বাকি গানগুলো হারিয়ে গেছে। নজরুল একাডেমিও এতো সমৃদ্ধ ভাণ্ডারকে সংরক্ষণ করেনি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক, কবি ও গীতিকার

আপন দেশ/এইউ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়