Apan Desh | আপন দেশ

কানাডার ছোট গল্পের মাস্টার অ্যালিস মুনরো

প্রদীপ সাহা

প্রকাশিত: ১১:৫২, ২৭ মে ২০২৪

কানাডার ছোট গল্পের মাস্টার অ্যালিস মুনরো

ফাইল ছবি

নোবেল সাহিত্য বিজয়ী এবং কানাডার ছোট গল্পের মাস্টার হিসেবে পরিচিত এবং সম্মানিত অ্যালিস মুনরো। তিনি চমৎকারভাবে আঁকা ছোট গল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন। গত ১৩ মে অ্যালিস মুনরো কানাডার অন্টারিওর পোর্ট হোপে নিজবাড়িতে মারা যান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

১৯৩১ সালের ১০ জুলাই কানাডার অন্টারিও প্রদেশের উইংহ্যাম এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মুনরো। তার বাবা ছিলেন খামার মালিক আর মা স্কুল শিক্ষক। মাত্র ১১ বছর বয়সে মুনরো ঠিক করে ফেলেন, বড় হয়ে একজন লেখক হবেন। সেই মতোই এগিয়েছে সবকিছু। অ্যালিস মুনরো একজন কানাডিয়ান ছোটগল্প লেখক ছিলেন। সুইডিশ একাডেমি তাকে ‘সমসাময়িক ছোট গল্পের মাস্টার’ বলে অভিহিত করে তাকে ২০১৩ সালে সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। তিনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে গল্প বলতে পারেন। তার গল্পের বিষয়বস্তু সুষ্পষ্ট ও বাস্তববাদী।

১৯৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় অ্যালিস মুনরোর প্রথম গল্প ‘দ্য ডাইমেনশন অব আ শ্যাডো’। তখন তিনি ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সেখানেই পরিচয় হয় জেমসের সঙ্গে। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে তারা বিয়ে করেন। সংসার করার পাশাপাশি লেখালেখি চালিয়ে গেছেন অ্যালিস মুনরো। জেমসের সঙ্গে তার দুই দশকের সংসার ভেঙে যায় ১৯৭২ সালে। এর আগে তিন কন্যাসন্তানের মা হন তিনি। ১৯৭৬ সালে আবার বিয়ে করেন জেরাল্ড ফ্রেমলিনকে। তখন থেকে গড়ে প্রায় চার বছরে তার একটি করে বই বেরিয়েছে। তার বেশির ভাগ গল্পে ওঠে এসেছে কানাডার গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ। অন্য বড় লেখকের মতো তিনি বিশ্বভ্রমণে বের হননি। স্বাভাবিকভাবেই চারপাশের গণ্ডির বাইরের বিষয় নিয়ে তার লেখালেখিও কম। 

অ্যালিস মুনরো কিশোর বয়সে গল্প লেখা শুরু করেন। প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান এবং বিবাহ ও মাতৃত্বের দায়িত্ব দ্বারা তার কর্মজীবনে তিনি নিজেকে একজন লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার প্রথম গল্পের সংকলন ‘ডান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। ১৯৭৮ সালে ‘হু ডু ইউ থিংক ইউ আর’ এবং ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য প্রোগ্রেস অব লাভ’। তিনি কানাডার সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন। আর সাহিত্যে নোবেলের পর সর্বোচ্চ মর্যাদাস¤পন্ন বুকার পুরস্কার পেয়েছেন।

আরও পড়ুন <> নাগলিঙ্গম ফুলের শোভা

তিনি কথাসাহিত্যের জন্য বার্ষিক গভর্নর জেনারেলের সাহিত্য পুরস্কারেও ভূষিত হন। অ্যালিস মুনরো নারী-পুরুষ উভয়ের সাধারণ জীবনের রহস্য, ঘনিষ্ঠতা এবং উত্তেজনাকে আলিঙ্গন করেছেন। তার পরবর্তী বইগুলো হলো ‘সামথিং আই হ্যাভ মিনিং টু টেল ইউ’ (১৯৭৪), ‘দ্য মুনস অব জুপিটার’ (১৯৮২), ‘ফ্রেন্ড অব মাই ইয়ুথ’ (১৯৯০), ‘আ ওয়াইল্ডারনেস স্টেশন’ (১৯৯৪) এবং ‘দ্য লাভ অব আ গুড উইম্যান’ (১৯৯৮)। পরবর্তী বই ‘ওপেন সিক্রেটস’ (১৯৯৪) কানাডার সম্মানিত গিলার পুরস্কার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল বুক ক্রিটিক সার্কেল পুরস্কার উভয়ই পেয়েছে। বইটিতে রয়েছে দক্ষিণ অন্টারিওর অর্ধসভ্য পাহাড় থেকে আলবেনিয়ার পর্বতের গল্প। ‘রানঅ্যাওয়ে’ (২০০৪) গিলার পুরস্কারে ভূষিত হয়। ‘দ্য ভিউ ফ্রম ক্যাসেল রক’ (২০০৭) ইতিহাস, পারিবারিক স্মৃতিকথা এবং কল্পকাহিনীকে একত্রিত করেছে। ‘দ্য বেয়ার কাম ওভার দ্য মাউন্টেন’ বইয়ের জন্য তিনি ২০০৯ সালে বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান। একই বছর তিনি ছোটগল্পের সংকলন প্রকাশ করেন ‘টু মাচ হ্যাপিনেস’। তার অনেক গল্পের মতো গল্পগুলো ‘ডিয়ার লাইফ’ (২০১২) লিঙ্গ, প্রেম এবং মৃত্যুর পরীক্ষার দ্বারা একীভূত হয়েছিল। 

আলঝেইমার রোগের ঘরোয়া ক্ষয় স¤পর্কে অ্যালিস মুনরোর ছোট গল্প ‘দ্য বিয়ার কাম ওভার দ্য মাউন্টেন’ (২০০১) প্রকাশিত হয়। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত চলচ্চিত্রে নির্মিত হয়েছিল ‘অ্যাওয়ে ফ্রম হার’ (২০০৬)। সারাহ পোলি পরিচালিত এবং জুলি ক্রিস্টি এবং গর্ডন পিনসেন্ট মাইকেল মারফি এবং অলি¤িপয়া ডুকাকিসের সঙ্গে তিনি অভিনয় করেছেন। অ্যালিস মুনরোর কাজের অন্যান্য চলচ্চিত্র অভিযোজনের মধ্যে রয়েছে ‘হেটশিপ লাভশিপ’ (২০১৩)। কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখক সাউল বেলো (যিনি ১৯৭৬ সালে পুরস্কার জিতেছিলেন), তাকে বাদ দিয়ে অ্যালিস মুনরো ছিলেন প্রথম কানাডিয়ান ১৩তম মহিলা।  

মুনরোর প্রকাশিত অন্যান্য ছোটগল্পের সংকলনের মধ্যে আছে ‘লাইভস অব গার্লস অ্যান্ড উইম্যান’, ‘সামথিং আই হ্যাভ বিন মিনিং টু টেল ইউ’, ‘দ্য মুনস অব জুপিটার’, ‘ফ্রেন্ড অব মাই ইয়োথ’, ‘ওপেন সিক্রেটস’, ‘দ্য লাভ অব আ গুড উইম্যান’, ‘হেটশিপ ফ্রেন্সশিপ কোর্টশিপ লাভশিপ ম্যারিজ’, ‘রানঅ্যাওয়ে’, ‘টু মাচ হ্যাপিনেস’ এবং ‘ডিয়ার লাইফ’। নোবেল সাহিত্য বিজয়ী এবং কানাডার ছোট গল্পের মাস্টার হিসেবে খ্যাত এই অ্যালিস মুনরোর মৃত্যুতে জানাই আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

আপন দেশ/এমআর

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়