Apan Desh | আপন দেশ

লিপ ইয়ার নিয়ে কতটুকু জানেন?

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

লিপ ইয়ার নিয়ে কতটুকু জানেন?

ফাইল ছবি

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। যা বছরের একটা অতিরিক্ত দিন বুঝায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের কারণেই চলতি ২৯ ফেব্রুয়ারি ‘লিপ ডে’ হলেও, এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ বেশ কমই দেখা যায়। এখন প্রশ্ন আসে কীভাবে হয় লিপ ইয়ার? 

মূলত সৌরজগতের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্যই লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিনটি জরুরি হয়ে হয়েছে। ৩৬৫ দিনে বছর পূর্ণ হয় মনে করা হলেও পুরোপুরি দিন লাগে না। সব মিলেয়ে সময় লাগে ৩৬৫ দশমিক ২৪২২ দিনের মতো। যে কারণে বছরের এক দিনের চার ভাগের প্রায় এক ভাগ সময় যোগ হয়। যা প্রতি চার বছরে একটা বাড়তি দিন যোগ করে।

রোমের ক্ষমতাধর শাসক জুলিয়াস সিজারের নাম আমরা অনেকেই শুনেছি। তার শাসন আমল শুরুর পূর্বে ৩৫৫ দিনে বছর গণনা করা হত। ফলে প্রতি দুই বছর পরপর ২২ দিনের মাস যুক্ত হতো। যা ছিল একটা জটিল প্রক্রিয়া। এর সমাধানে এ শাসকের নির্দেশেই ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু হয়। যে অতিরিক্ত প্রায় ছয় ঘন্টা থেকে যায়, তা মিলিয়ে নিতে চার বছর পরপর একটা অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যুক্ত হয়।

প্রতি চার বছর পরপর আসে লিপ ইয়ার। সে বছরকে ১০০ দিয়ে ভাগ করা গেলেও ৪০০ দিয়ে করা যায় না। তবে তা লিপ ইয়ার নয়। ফলে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী আমরা ২০০০ সালে লিপ ইয়ার পেয়েছি, ১৬০০ সালে লিপ ইয়ার ছিল, কিন্তু আবার ১৭০০, ১৮০০ ও ১৯০০ লিপ ইয়ার নয়।

পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির নেতৃত্বে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু হয়। যেখানে প্রতি চারশ বছরে তিনটি লিপ ডে বাদ পড়ে। যে হিসাব আজ অবদি চালু আছ। যদিও বর্তমানি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন মানুষকে হয়তো আবারো এ নিয়ে নতুন করে ভাববে।

আরও পড়ুন <> জীবন কাটান বিন্দাস

অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা সম্রাট সিজার অগাস্টাসের ব্যক্তিগত ইচ্ছাতেই ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। এক সময় ফেব্রুয়ারি মাস ৩০ দিনের ছিল। লিপ ইয়ারের এই দিনে এক সময় মেয়েরা ছেলেদের মনের কথা জানাতেন। যার অন্যতম উদাহরণ পঞ্চম শতকে সেন্ট ব্রিজেটের ঘটনা, যা নিয়ে অবশ্য বেশ বিতর্ক আছে। প্রচলিত আরেকটি ঘটনারি সঙ্গে যুক্ত আছেন স্কটল্যান্ডের রানি মার্গারেট আইন জারি। সে সময় কোনো পুরুষ লিপ ইয়ারে মেয়েদের দিক থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে জরিমানা দিতে হত। এই রীতি বেশি প্রচলিত ছিল ১৯ শতকে।

বলে রাখা ভালো, লিপ ইয়ারে মেয়েদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে ভিন্নতা দেখা যায়। ডেনমার্কে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলেদের মনের কথা জানাতেন মেয়েরা। এ দিনে কোনো পুরুষ নারীর দেয়া বিয়ের প্রস্তাব না মানলে ওই নারীকে ১২ জোড়া দস্তানা দিতে হয়। ফিনল্যান্ডে দিতে হত স্কার্ট বানানোর কাপড়। অন্যদিকে গ্রিসে লিপ ইয়ারের দিন বিয়ে করা অশুভ।

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের রাজধানী বলে স্বীকৃত টেক্সাসের অ্যান্থনি শহর। ১৯৮৮ সালে এই শহরের বাসিন্দা ও লিপ ইয়ারে জন্ম নেয়া ম্যারি অ্যান ব্রাউন চেম্বার অব কমার্সের কাছে যান শহরে একটি লিপ ইয়ার উৎসবের আবেদন নিয়ে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়। সেময় অ্যান্থনিকে ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্বের লিপ ইয়ার রাজধানী হিসেবে।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছাড়াও অন্যান্য ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারের প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক ইরানের ক্যালেন্ডারে প্রতি ৩৩ বছরে আটিটি লিপ ডে আছে। এ ছাড়া ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশের যে বাংলা পঞ্জিকাবর্ষ তাতেও লিপ ইয়ার এমনভাবে রাখা হয় যাতে লিপ ডে সব সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি থাকে।

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযাত্রা নিয়েও রয়েছে এ ফেব্রুয়ারির ২৯ দিন নিয়ে মাজার তথ্য। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে চূড়ান্ত অভিযানের সময় ১৫০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির চন্দ্রগ্রহণকে নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগান।

আপন দেশ/এমআর

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়