মৃত্যুমিছিল দেখে পুলিশকর্মীর মৃত্যু!

চোখের সামনে এত মৃত্যু, রক্ত, আর্তনাদ দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি রবি। তার সহকর্মী জানান, হাসপাতালের মর্গে যখন মরদেহের সংখ্যা বাড়ছিল, রবি সে সব মরদেহ দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে তিনি নিজের নামও নাম লেখালেন মৃত্যুর মিছিলে। 

হাসপাতালের মর্গে ক্রমেই বাড়ছিল মরদেহের সংখ্যা। শিশু থেকে বৃদ্ধ চোখের সামনে নিথর হয়ে পড়েছিলেন তারা। টেম্পো, বাস ভরে ভরে মরদেহ আসছিল। আর সেগুলি মর্গে রাখা হচ্ছিল। হাসপাতাল জুড়ে স্বজনহারাদের কান্নার রোল। সব মিলিয়ে পরিবেশ আরও শোকাতুর হয়ে উঠেছিল পরিবেশ।

হাথরসে পদপিষ্টের ঘটনার পরই এটা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে মোতায়েন করা হয়েছিল দুই পুলিশকর্মীকে। হাসপাতালে যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, তার জন্য সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। তাদের মধ্যে এক জন কনস্টেবল রবি কুমার। দুপুর ২ টার পর থেকেই মরদেহের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছিল হাসপাতালের মর্গে। রবি এবং তার এক সহকর্মীকে মোতায়েন করা হয়েছিল মর্গের সামনে।

চোখের সামনে এত মৃত্যু, রক্ত, আর্তনাদ দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি রবি। তার সহকর্মী জানান, হাসপাতালের মর্গে যখন মরদেহের সংখ্যা বাড়ছিল, রবি সেসব মরদেহ দেখে খুবই বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। মর্গের সামনেই অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন তিনি। তখনও বোঝা যায়নি ওর মধ্যে কী চলছে। হঠাৎ তিনি অসুস্থবোধ করেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হয় রবির। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই পুলিশকর্মীর।

রবির সহকর্মী জানিয়েছেন, রক্ত, মৃতদেহ, ময়নাতদন্ত, এসব পরিস্থিতির সঙ্গে পুলিশকর্মীরা খুবই পরিচিতি। নিত্যদিন তাদের এ সব নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়। ১০ বছরের কর্মজীবনে রবি নিজেও বহুবার বহু মৃত্যু দেখেছেন, রক্তপাত দেখেছেন। কিন্তু নিজের কর্তব্য থেকে বিরত থাকেননি। হাথরসের এ হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। এমন মৃত্য তার মনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল। তাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু রবির যে মৃত্যু হবে, সেটা মেনে নিতে পারছেন না তার সহকর্মীরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, সিদ্ধার্থ নগরে থাকতেন রবি। ২০১৪ সালে কাজে যোগ দেন। ২০২২ সালে অওয়াগড় থানায় বদলি হয়ে আসেন। এ বছরের ১৬ জুন পুলিশ লাইনে কুইক রেসপন্স টিমে (কিউআরটি) যোগ দেন।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) হাথরসের মুঘলাগড়ি গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১২১। আহত আরও বহু। এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। নানা প্রশ্ন উঠে আসছে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আয়োজকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই এফআইআর দায়ের করে মামলা শুরু করেছে পুলিশ।

আপন দেশ/এইউ