Apan Desh | আপন দেশ

১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৪০, ২৫ জুলাই ২০২৪

১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ২০ বিলিয়ন ডলার

ফাইল ছবি

ডলার সংকটের কারণে আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত দেয়া আছে। এর প্রভাবে আমদানি কমেছে। তবে একই সময় রফতানি আয়ও কমে গেছে। আশানুরূপ হারে বাড়েনি রেমিট্যান্স। যার কারণে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় হ‌চ্ছে বেশি। 

বাণিজ্য ঘাটতির সঙ্গে চলতি হিসাবের ঘাটতি বাড়ছে। সঙ্গে সামগ্রিক বৈদেশিক লেনদেনেরও বিশাল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে রফতানি আয় সমন্বয় হওয়ায় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত সময়ের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে মাস পর্যন্ত সময়ে তিন হাজার ৭৩৪ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ সময় আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এতে অর্থবছরের ১১ মাসে ২ হাজার ২২ কোটি (২০.২২ বিলিয়ন) ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১১৮ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। যদিও তার আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময় বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

ডলার সংকট কাটাতে নানা উপায়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। একই সঙ্গে তুলনামূলক কম প্রয়োজন বা বিলাসী পণ্যের এলসি খোলার সময় শতভাগ পর্যন্ত নগদ মার্জিনের শর্ত দেয়া আছে। এসব কারণে আমদানি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, আগে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক ছিল। যা এখন সমন্বয় করা হয়েছে। এতে  করে আর্থিক হিসাবে এ উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর্থিক হিসাবে ২০৮ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত আছে। যা তার আগের অর্থবছরের একই সময়ের এ উদ্বৃত্ত ছিল ৫৫১ কোটি ডলার। তবে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

চলতি হিসাবের ভারসাম্য (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স)

কোনো দেশের চলতি হিসাব মূলত বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য এবং মানুষের আয় কেন্দ্রিক আয়-ব্যয়ের হিসাব। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

সবশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থ বছরের ১১ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ১ হাজার ২০২ কোটি ডলার।

ওভার অল ব্যাল্যান্স

সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যাল্যান্স) বড় ঘাটতিতে আছে বাংলাদেশ। জুলাই-মে মাসে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৮ কোটি ডলার। এ সূচকটি আগের বছর একই সময় ঘাট‌তি ছিল ৮৮০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিশোধ ঝুঁকি এড়াতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ ডলার বিক্রি করছে।

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি

গত অর্থবছর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বা ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার (১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন) বিক্রি করা হয়েছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রি হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৩৩ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দুই হাজার ১৩৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আগের বছর একই সময় পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৯৪১ কোটি ডলার।

বিদেশি বিনিয়োগ

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে বাংলাদেশ যেখানে ৪০৭ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। গেল অর্থবছরের একই সময় সেখানে এসেছে ৩৮১ কোটি ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নেট এফডিআই বলা হয়।

আলোচ্য অর্থবছরে নেট বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে দশমিক ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৫৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরে নেট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১৫০ কোটি ২০ লাখ ডলার।

একই সঙ্গে আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। গত অর্থবছরের ১১ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নেট) যা এসেছিল তার চেয়ে ১১ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ঋণাত্মক ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়