Apan Desh | আপন দেশ

সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ৩০ জুন ২০২৪

সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি

ফাইল ছবি

কোনোভাবেই থামছে না সঞ্চয়পত্র ভাঙা। প্রতি মাসেই মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছে বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ইতিবাচক ছিল। তবুও পরের আট মাস ঋণাত্মক হয়েছে। অর্থাৎ শেষ আট মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। এজন্য গত আট মাস ধরে বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিক্রির চেয়ে আগের আসল ও সুদ বাবদ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) নিট বিক্রি ঋণাত্মকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১০ মাসে আগের আসল ও সুদ বাবদ ১৪ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে।

এছাড়া, গত অর্থবছরের এপ্রিলেও ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। তবে এরপর থেকে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হতে থাকে। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক হয় ১৪৭ কোটি, অক্টোবরে এক হাজার ৪০ কোটি, নভেম্বরে এক হাজার ৫৫৪ কোটি, ডিসেম্বরে ২ হাজার ২০৪ কোটি, জানুয়ারিতে ১ হাজার ২৮৭ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৫৪১ কোটি এবং মার্চে ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ যে কমবে, তা সরকার আগেই আন্দাজ করেছিল। সেজন্য চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩২ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। ওই অর্থবছরের শেষে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৩ সালের এপ্রিলে ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা, যা চলতি এপ্রিলে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। এক বছরে ৭ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার ঋণ কমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমার কারণগুলো হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা। সঞ্চয়পত্রের সুদের বিপরীতে উচ্চ করারোপ ও সুদ কমানো এবং উচ্চ মূল্যষ্ফীতি ও ব্যাংকে আমানতের সুদ বৃদ্ধি। ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে এনআইডি ও টিআইএন জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা শুরু হয়। ফলে যারা আগে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তাদের অনেকেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে নতুন করে আর এতে বিনিয়োগ করেননি।

৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ওপর অর্জিত সুদের বিপরীতে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়। এছাড়া বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের যে স্তর চালু করা হয়েছে, তাতে নতুন বিনিয়োগে বিমুখ হয়েছেন অনেকেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে ৯.৮৯ শতাংশ মূল্যষ্ফীতি হয়েছে। গত বছরের মার্চে মূল্যষ্ফীতি বেড়ে ৯ শতাংশের অতিক্রমের পর তা আর কোনো মাসেই ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। অর্থাৎ ১৫ মাস ধরে মূল্যষ্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

সুতরাং উচ্চ মূল্যষ্ফীতির চাপে পড়ে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন একশ্রেণির বিনিয়োগকারী। আবার অতি হিসাবি বিনিয়োগকারী কর কাটার পর যা পাচ্ছেন, মূল্যষ্ফীতি বিবেচনায় তাতে লাভ খুঁজে পাচ্ছেন না। আইএমএফের পরামর্শে মূল্যষ্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। সে জন্য কেউ কেউ সঞ্চয়পত্র ভেঙে উচ্চ সুদে ব্যাংকে আমানত রাখছেন বলে অনুমান করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের যে ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে, তাতে বিভিন্ন শর্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের ঋণবিষয়ক শর্তও রয়েছে। এটি হচ্ছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সঞ্চয়পত্রকে সরকারের মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের এক-চতুর্থাংশের মধ্যে রাখতে হবে।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়