Apan Desh | আপন দেশ

টুকুপুত্রের শতকোটি টাকার বালু বাণিজ্য বন্ধ

আলমগীর হোসেন নাবিল, পাবনা

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৭:৫৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টুকুপুত্রের শতকোটি টাকার বালু বাণিজ্য বন্ধ

ছবি -আপন দেশ

পাবনার যমুনা ও হুরাসাগর নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন শামস রঞ্জন।

সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর ছেলে ও সাবেক মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন আসিফ শামস। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে যায় তার বালু বাণিজ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পায়না মহল্লায় হুরাসাগর নদের পাড়ে বেঁধে রাখা রয়েছে ৩০টি বালু তোলার ড্রেজার। অথচ সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত ড্রেজারগুলো দিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হতো।

উত্তোলনকৃত বালু রাখা হতো যমুনার পেঁচাকোলা থেকে শুরু করে হুরাসাগর নদের নবীননগর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয়রা জানায়,  এসব স্থানে স্তূপাকারে এখনো রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার বালু।

স্থানীয়রা আরও জানায়, বর্তমানে এ বালু সম্রাজ্য দখল নিতে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যে তিন গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে।তবে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি করছে সেনাবাহিনী।

সরকারিভাবে বালুমহাল না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ যমুনা পাড়ের বিভিন্ন গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে ফেলে কোটি  টাকার বালু উত্তোলন করা হতো। এ নিয়ে একাধিকবার নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলেও বাবার ক্ষমতার প্রভাবে তা মানেনি টুকু পুত্র রঞ্জন।

গত ২৫ বছর ধরে বালু উত্তোলন করছে বিভিন্ন চক্র। তবে শেষ ৩ বছর বালু তোলার ব্যাপারটি ছিল ভিন্ন। এসময়টা একক নিয়ন্ত্রণে  বালু উত্তোলন করেছেন  টুকুর ছেলে রঞ্জন।

বালু বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে রঞ্জনের ছিল বিশেষ বাহিনী। যাদের বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সুসজ্জিত করে রাখা হতো।

বালু উত্তোলনের ফলে নদীভাঙনের কবলে অনেক কৃষি জমি বিলীন হয়েছে। কৃষকের জমি দখলে নিয়ে উত্তোলনকৃত বালু রাখা হতো। এ নিয়ে কেউ মুখ খুললে রঞ্জনের সেই বাহিনী দিয়ে করা হতো নির্যাতন, অবৈধ মামলা দিয়ে করা হতো হয়রানি। তবে আপাতত বন্ধ রয়েছে নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন কার্যক্রম।

এলাকাবাসী জানায়, ৩ বছরে যে পরিমাণ বালু  তোলা হয়েছে তা
আগে কখনও হয়নি। সে সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্য অভিযান চালানো হতো।

২০২১ সালে টুকু পুত্র রঞ্জন বালু উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই বছরের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বেড়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি যমুনা নদীর বালু উত্তোলন তার একক নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে স্থানীয় ড্রেজারের পাশাপাশি ভাড়া আনা কয়েকটি ভারী ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা বাড়িয়ে দেন কয়েক গুণ।

এতে বালু উত্তোলনে কোন রাজস্ব দিতে হতো না, ফলে পুরো আয়ই যেত আসিফের পকেটে। এভাবে গত ৩ বছরে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন বলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

এদিকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে যমুনা নদীপাড়ের নেওলাইপাড়া, নতুন বাটিয়াখড়া, চর  নাগদাহ, হাটাইল-আড়ালিয়া, চর সাঁড়াসিয়া গ্রামসহ সাতটি গ্রামে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পাউবোর জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধও পড়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।

সম্প্রতি বড়া পৌর এলাকার পায়না মহল্লায় হুরাসাগর নদের পাড়ে গিয়ে কথা হয় পায়না মহল্লার মো. রাতুল ও কালু শেখের সঙ্গে। তারা দুজনেই ড্রেজারে বালুকাটার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তারা জানান, পায়নাসহ পাশের কয়েকটি মহল্লার প্রায় ৭শ শ্রমিক যমুনা নদী থেকে বালু তোলার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া রয়েছেন বালুবাহী ট্রাকে কাজ করা কয়েক শ' শ্রমিক। ৫ আগস্টের পর তারা বেকার রয়েছে।

বেড়ার সাবেক পৌর কাউন্সিলর এনামুল হক বলেন, বাবার প্রভাব খাটিয়ে রঞ্জন অবৈধ বালু তুলে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। তিনি বর্ষার সময় অনেক কৃষকের ফসলি জমি থেকেও জোড় করে বালু তুলে কৃষিজমি নষ্ট করেছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবু তিনি থামেননি। উলটো কৃষককে ভয়ভীতি প্রদর্শন, মারধর ও মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন।

এদিকে রঞ্জনের অনুপস্থিতিতে স্থানীয় কয়েকটি চক্র সুযোগ বুঝে এ বালু সম্রাজ্য দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি অনুকূলে এলেই আবারও বালু তোলা শুরু হবে বলে এলাকাবাসী ধারণা করছেন।

পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে বালু তোলা নদী ও নদীপাড়ের এলাকার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া অবৈধ বালু তোলার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বালু উত্তোলন যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সে ব্যাপারে আমরা সরব থাকবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদুল ইসলাম বলেন, হুরাসাগর নদী ও যমুনার কিছু স্থানে সেনাবাহিনী ও বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং করছে। এর বাইরে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বালু তোলা হলে তা একেবারেই অবৈধ। কারণ আমাদের বেড়া উপজেলায় কোনো বালু মহাল নেই। এর আগেও আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছি। ভবিষ্যতেও অবৈধভাবে কাউকে বালু তুলতে দেয়া হবে না।

আপন দেশ/মাসুম

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়