Apan Desh | আপন দেশ

কবর দেয়ার সময় কেঁদে উঠল নবজাতক, অতঃপর...

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৩ জুন ২০২৪

কবর দেয়ার সময় কেঁদে উঠল নবজাতক, অতঃপর...

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে কবরে দাফনের সময় কান্না করে উঠেছে একটি নবজাতক শিশু। পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালের গাফিলতিতে নবজাতক শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় কবর দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। এ ঘটনা বিচার দাবি করেন তারা। 

জানা যায়, শনিবার (১ জুন) বিকেলে উপজেলার পূর্ব মিঠানালা গ্রামের মীর হোসেনের ছেলে মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পেটে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হয়। তাকে উপজেলার মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক শারমীন আয়েশা আল্ট্রা করার পর জানান বাচ্চা মারা গেছেন। 

পরে রাতে চিকিৎসক ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত পৌনে ৯টায় নবজাতক ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী, একটি কার্টনে করে শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টন খুললে নবজাতক শিশুটি কান্না শুরু করেন। 
 
মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করে বলেন, সকালেও বাচ্চা সুস্থ আছে বলে জানিয়েছিলেন ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বিকেলে পুনরায় চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কার্টনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুনে করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। 

তিনি বলেন, এরই মধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। যেহেতু ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী বাচ্চা পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেয়ার জন্য কার্টন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে উপস্থিত লোকজন আমার বাচ্চা জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালের ৬তলায় ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

তিনি আরও বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯ দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনো অপরিপক্ব। তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এজন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী। আমি তাদের শাস্তি দাবি করছি।

আরও পড়ুন>> আলীকদমে সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

মীরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভিড় দেখে ভেতরে যাই। এরপর দেখি ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কীভাবে মৃত বললো, আমি বুঝতেছি না।

মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে নরমাল ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর ১ মিনিট বাচ্চার নড়াচড়া ছিল। ১৫ মিনিট ওই চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। এরপর রোগীর স্বজনরা তাকে দেখতে আসে। একপর্যায়ে কখন হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়, আমরা বলতে পারি না।

শিশুটিকে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নবজাতক বাচ্চাটি মারা গেছে, এমনটা স্বজনদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও জানি না। যদি মারা যেতো তাহলে আমরা ডেথ সার্টিফিকেট দেব, রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করব। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। নবজাতকটিকে রাতে পুনরায় হাসপাতালে আনলে আমরা তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি।

মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। এখন শুনলাম। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়